প্রতিবেদক: মেহেদী হাসান মুরাদ
ধর্মপাশা: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারী এক রাতেই দুটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ওয়ার্ল্ড ভিশনের শিশু ফোরামের সদস্যদের সচেতনতা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনি রায়ের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের ফলে দশম ও অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী অপ্রাপ্তবয়স্ক বয়সে বিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে।
প্রথম ঘটনা: শিশু ফোরামের সভাপতির উদ্যোগে রক্ষা পেল রনিয়া
সন্ধ্যা ৭টার দিকে ধর্মপাশার সেলবরষ ইউনিয়নের বগারপাচুর গ্রামে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রনিয়া (১৬)-র বিয়ের আয়োজন চলছিল। তার বাবা-মা তাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বয়সেই বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
তবে বিষয়টি টের পান ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত শিশু ফোরামের সভাপতি ইহাদুল ইসলাম জিদান। তিনি দ্রুত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনি রায়কে বিষয়টি জানান।
খবর পেয়েই ইউএনও জনি রায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং রনিয়ার বাবা-মায়ের কাছে তার জন্মনিবন্ধন দেখতে চান। যাচাই করে নিশ্চিত হন, মেয়ের বয়স এখনো ১৮ হয়নি। তিনি বলেন, “এটি রনিয়ার পড়াশোনার সময়, এখন বিয়ে দিলে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। আইনত এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের পর রনিয়ার বাবা-মা ক্ষমা চেয়ে লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন যে, মেয়ের বয়স ১৮ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিয়ে দেবেন না। তবে তারা শর্ত দেন, মেয়েটির ১৮ বছর পূর্ণ হলে একই ছেলের সঙ্গেই বিয়ে সম্পন্ন করবেন।
দ্বিতীয় ঘটনা: বাবা পালিয়ে গেলেও বন্ধ হলো ললির বিয়ে
প্রথম ঘটনাটি সমাধান করার পর রাত ৯টার দিকে পার্শ্ববর্তী পাইকুরাটি ইউনিয়নের লেঙ্গুর গ্রামে আরেকটি বাল্যবিবাহের খবর আসে। জানা যায়, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ললি (বয়স ১৪)-র বিয়ের আয়োজন চলছে।
খবর পেয়েই ইউএনও জনি রায় দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে মেয়ের বাবা কানাই প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন স্থানীয় ইউপি মেম্বারের সহযোগিতা নেয়। ইউপি মেম্বার ললির মা ওয়াসকানার সাথে আলোচনা করে এবং অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে লিখিত অঙ্গীকার করেন যে, মেয়ের বয়স ১৮ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে হবে না।
ইউএনও বলেন, “আমরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে আছি। প্রতিটি পরিবারকে সচেতন হতে হবে। মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ দিতে হবে, তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা যাবে না।”
সচেতনতা ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ
একই রাতে দুটি বাল্যবিবাহ বন্ধ হওয়া প্রমাণ করে, সামাজিক সচেতনতা ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
স্থানীয়রা বলছেন, “শুধু প্রশাসনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”
এই দুটি ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো যে, সচেতন নাগরিকদের সহযোগিতা এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারির ফলে বাল্যবিবাহ রোধ সম্ভব। তবে এ বিষয়ে আরও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ের শিকার হতে না হয়।
Leave a Reply