নিউজ ডেক্স:
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ১০ নম্বর বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) কার্ড বরাদ্দে চাঞ্চল্যকর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই অনিয়মের কেন্দ্রে রয়েছেন ১৩ নম্বর গোপালপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব উজ্জ্বল কুমার অধিকারী, যিনি পার্শ্ববর্তী বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
বালুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শওকত আলীর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, সচিব উজ্জ্বল কুমার অধিকারী সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে একজন ব্যক্তিকে দিয়ে টিসিবির গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করান, যার ফলে তালিকাভুক্ত ১৭৪৬ জন উপকারভোগীর বাইরে আরও ২২৬ জনের নামে ভুয়া কার্ড ইস্যু করা হয়। এতে করে কার্ডপ্রতি ৬০ টাকা হারে প্রায় ১৩,৪০০ টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ এলেও তার কোনো হিসাব মেলেনি—ফলে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
আরও অনুসন্ধানে দেখা যায়, সচিব উজ্জ্বল কুমার অধিকারীর ব্যক্তিগত প্রোফাইল তথা স্থানীয় সরকার বিভাগের ওয়েবসাইটে তার তথ্যের স্থানে একজন আত্মীয়ের ইমেইল ব্যবহার করা হয়েছে, যা তার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং স্বজনপ্রীতির পরিষ্কার প্রতিচ্ছবি।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থেকেও তিনি সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত করেন, যা ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এতে সব ইউপি সদস্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, “আমি নিজেই কষ্ট করে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর মধ্যে আমার ইউনিয়নের সচিবের বিরুদ্ধে পাশের ইউনিয়নে এমন অভিযোগ উঠেছে—এটি আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। আমি বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর করতে চাই।”
প্রসঙ্গত, গোপালপুর ইউনিয়নের দুইজন ইউপি সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং একজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ফলে চেয়ারম্যানকে এককভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা সচিবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সচিবের প্রতি জনরোষ ক্রমেই বাড়ছে এবং যেকোনো সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের সব ইউপি সদস্য একযোগে সচিব উজ্জ্বল কুমার অধিকারীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং তাঁর বিধি মোতাবেক স্থানান্তর ও কার্যকর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রকাশ্যে অবস্থান নিচ্ছেন। তারা জানান, সচিবের অনিয়মের কারণে পরিষদের সম্মান ও কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যা আর মেনে নেওয়া যায় না।
এমতাবস্থায়, রংপুর জেলার ডিডিএলজি (উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার) এর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী। তারা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা এবং ইউনিয়নের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply