মেহেদী হাসান মুরাদ –
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার নানকর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোন্নাফ মন্ডলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে তিনি অবসর গ্রহণ করলেও এখনও বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের চাবিসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিজের জিম্মায় রেখে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় তিনি প্রতিদিন অফিস খুলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছেন। শুধু তাই নয়, তাকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে মনোনীত করার জন্য নানাভাবে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চলের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় সরকারি বরাদ্দপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, টিউশন ফি আত্মসাৎ, এবং জমি দান করেও ভোগ-দখলে রাখা—এসবই তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের অন্তর্ভুক্ত।
২০০০ সালে দুইজন কর্মচারী ও একজন সহকারী শিক্ষককে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের পদ না থাকায় তারা এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি, ফলে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, মোন্নাফ মন্ডল কখনও নিজেকে অভিভাবক সদস্য, আবার কখনও দাতা সদস্য হিসেবে দেখিয়ে একাধিকবার বিতর্কিত ও অবৈধ কমিটি গঠন করেছেন।
একজন সহকারী শিক্ষককে পাঠদান থেকে বিরত রাখতে ষড়যন্ত্র করে তার কাছ থেকে ৫০,০০০ টাকা আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে টিউশন ফি বাবদ প্রাপ্ত লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও দাবি করেছে এলাকাবাসী।
তবে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, ১৯৯৭ সালে বিদ্যালয়ের নামে ৫০ শতক জমি দলিল করে দেওয়ার পরেও সেটি এখনো স্কুলের নামে হস্তান্তর না করে নিজেই ভোগ-দখল করে আসছেন। অবসরের ঠিক আগে বিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে অর্থ গোপনে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
সম্প্রতি, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুইজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে মোন্নাফ মন্ডল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব নিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে লিখিত প্রমাণও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোন্নাফ মন্ডল বলেন, “মানুষ অনেক কিছু বলবে, আমি বিদ্যালয়কে ভালোবাসি বলেই আসা-যাওয়া করি। কমিটিতে থাকাটাও যদি সমাজ চায়, আমি থাকতে পারি। এসব আইনের বিষয়।”
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ অবহিত না করায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। তবে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরিদর্শক মোস্তফা কামাল বলেন, “এটি জেলা প্রশাসকের আওতাধীন বিষয়। তবে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষককে কমিটিতে নেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তদন্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Leave a Reply