নিজস্ব প্রতিবেদক, এমকে নিউজ
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী হাটের ওপর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে নির্মিত চারলেন সড়কের মাঝখানে কংক্রিটের মিডিয়ান দেয়াল সাধারণ পথচারীদের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারাপারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিনই এ অঞ্চলের শত শত মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শঠিবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জনতা ব্যাংক পর্যন্ত দীর্ঘ একাংশে মহাসড়কে পারাপারের কোনো ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস কিংবা জেব্রাক্রসিং নেই। ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, শিশু, দোকানি ও সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে ওই মিডিয়ান দেয়াল ডিঙিয়ে যাতায়াত করছেন।
গত ১৫ দিনের মধ্যে অন্তত ছয়জন পথচারী দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যে স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি নির্জন জায়গা—এক পাশে একটি ফিসারিজ অফিস, অন্য পাশে একটি পুকুর। সেখানে মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চলে। ফলত আন্ডারপাসটিও প্রায় অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, “রাস্তাটার এক পাশে দাঁড়িয়ে অন্য পাশে যেতে হলে ১০–১২ মিনিট হেঁটে ঘুরে যেতে হয়। অনেকেই তাই বাধ্য হয়ে দেয়াল ডিঙাচ্ছেন, কিন্তু সেটাই এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।”
এদিকে পথচারীদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ক্রসিং পয়েন্ট না থাকায় যান চলাচলের মাঝখানে দেয়াল বেয়ে পার হওয়ার সময় প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
মানবাধিকারকর্মী আশিকুর রহমান মন্ডল বলেন, “অভিযোজিত সড়ক উন্নয়নের নামে যদি জনগণ প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে, তাহলে সেটি কোনো উন্নয়ন নয়। আমরা বারবার বলেছি—নিরাপদ পারাপারের ব্যবস্থা করুন। কিন্তু কেউ শুনছে না।”
তিনি আরও জানান, জনগণের প্রাণহানির ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এলাকাবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটা হবে।
শঠিবাড়ী হাট রংপুর বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ এখানে আসেন ও চলাচল করেন। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় জনগণের মৌলিক নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়ায় এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির মানুষ।
এলাকাবাসীর দাবি, শঠিবাড়ী বাজারসংলগ্ন অংশে অন্তত একটি ফুট ওভারব্রিজের ব্যবস্থা করা, জেব্রাক্রসিং স্থাপন ও ট্রাফিক সিগনাল বসানো এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন এবং ভবিষ্যতে সঠিক স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণও জরুরি।
Leave a Reply