মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রামেশ্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষিকাদের মধ্যে চরম হাতাহাতির ঘটনা ঘটায় পুরো এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মোসলেম উদ্দিন নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ের গাছ কাটাসহ টিন, ইট, সিমেন্ট, রড আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। পতিত সরকারের আমলে বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণের সময় নিম্নমানের কাজও করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের জমি বর্গা দিয়ে উৎপাদিত ফসল ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।
এরই মধ্যে গত সোমবার (১৯ মে) প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ে দুই নারী শিক্ষিকার মধ্যে চরম হাতাহাতি হয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনেই ঘটে যায় লজ্জাজনক দৃশ্য—এক শিক্ষিকা অপর শিক্ষিকার চুল ধরে টেনে ফেলে, জুতা দিয়ে মারধর করে। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার পর স্থানীয় জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। দুইদিন তালাবদ্ধ থাকার পর সংবাদকর্মীদের অনুরোধে তালা খুলে দেয়া হয়।
হাতাহাতির ঘটনায় উভয় পক্ষই মিঠাপুকুর থানায় এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে যান সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহনাজ পারভিন। তবে তিনিও স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীদের তোপের মুখে পড়েন। ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিতরা বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন এবং প্রধান শিক্ষক মোসলেম উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট তিন নারী শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ঘটনার দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। পরে জেনেছি শিক্ষিকাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক শাহ বলেন, “বিদ্যালয়টি নিয়ে তিনটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষিকাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া হাতাহাতির ঘটনাও অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসে প্রতিবেদন আকারে পাঠিয়েছি। যথাযথ তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা শিশুদের মানসিক বিকাশে গুরুতর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারা দ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিবেদন: মেহেদী হাসান মুরাদ
Leave a Reply