রায়হান কবির প্রধান- মিঠাপুকুর
রংপুরের মিঠাপুকুরে অমানবিক এক ঘটনার শিকার হলো নিরীহ একটি ছাগল। উপজেলা চত্বরে ছাগল চরানোকে কেন্দ্র করে বিরোধ বাধে দুই ব্যক্তির মধ্যে। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ফোলা মিয়া নামে এক ব্যক্তি নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করে গর্ভবতী ছাগলটিকে, যার ফলে দুটি বাচ্চা মারা যায়। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রনি মিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গরীবের শেষ সম্বল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ
ভুক্তভোগী কৃষ্ণপুর গ্রামের রনি মিয়া, একজন ভূমিহীন দিনমজুর। প্রতিদিনের রোজগারে তার পরিবার চলে— স্ত্রী, সন্তান এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকার লড়াই। অনেক কষ্টে ১২ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন গর্ভবতী ছাগলটি, যার বাচ্চা বিক্রির আশায় তিনি ছিলেন। কিন্তু এক নির্মম আঘাতে সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল।
রনি মিয়া জানান, প্রতিদিনের মতো তিনি ও তার স্ত্রী ছাগলটি নিয়ে মাঠে যান। এ সময় উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ফোলা মিয়া ছাগল চরানো নিয়ে তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রনি মিয়ার ওপর চড়াও হন এবং রাগের বশে গর্ভবতী ছাগলটিকে আঘাত করেন। ছাগলটি যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে, পরে মারা যায় তার দুটি বাচ্চা।
ছাগল চরানোর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড?
একটি প্রাণীর কী অপরাধ ছিল? যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, তবে দেশের আইন রয়েছে। সরকারি জায়গায় গবাদিপশু চরানোর বিষয়ে নিয়ম আছে, স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে। কিন্তু একজন মানুষ কীভাবে এতটা হিংস্র হতে পারে যে, রাগের বশে একটি নিরীহ প্রাণীর উপর নির্মম আঘাত হানতে পারে?
দেশের প্রচলিত আইনে পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা দণ্ডনীয় অপরাধ। গরীবের শেষ সম্বল কেড়ে নেওয়ার এ ঘটনায় প্রশাসন এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশ্ন জাগে, একজন ভূমিহীন দিনমজুর কি ন্যায়বিচার পাবে?
গরীবের শেষ আশ্রয় থানায়, মিলবে কি বিচার?
রনি মিয়া স্থানীয়দের কাছে বিচার চাইতে গেলে কেউ তাকে সহায়তা করেনি। বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়— বিচার কি সত্যিই হবে? নাকি গরীবের কান্না চাপা পড়ে যাবে ক্ষমতাশালী প্রভাবশালীদের ছায়ায়?
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আমাদের দাবি, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পশুর প্রতি এ ধরনের অমানবিকতা যদি আজকে ছাড় পায়, তাহলে আগামী দিনে আর কত প্রাণ এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হবে?
এই দেশ শুধু প্রভাবশালী আর ক্ষমতাশালীদের জন্য নয়। গরীবেরও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। আমরা চাই, রনি মিয়া যেন ন্যায্য বিচার পান, এবং ভবিষ্যতে যেন আর কোনো প্রাণী এভাবে নিষ্ঠুরতার শিকার না হয়।
Leave a Reply