মেহেদী হাসান মুরাদ - রংপুর।
মাত্র ৫৮ দিনের কার্যকালেই রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় একজন ইউএনও হিসেবে জিল্লুর রহমান যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সত্যিই বিরল। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং এলাকার উন্নয়নের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার স্বল্প সময়েই তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক করে তুলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত কর্মঠ এবং জনদরদি একজন কর্মকর্তাকে কেন এত দ্রুত বদলি করা হলো? এই স্বল্প সময়ের কার্যক্রমে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল জনকল্যাণমুখী।
জনগণের সেবক জিল্লুর রহমান: একঝাঁক সফল অভিযান
মিঠাপুকুর উপজেলাকে একটি সুশৃঙ্খল এবং আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইউএনও জিল্লুর রহমান নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তাঁর কর্মতৎপরতায় উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম যেমন গতিশীল হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও কমেছে। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো:
* অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ: তিনি উপজেলা পরিষদের ভেতরের অবৈধ দোকানপাট, প্রবেশপথের বাইপাস এবং আন্ডারপাসের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জনসাধারণের চলাচল সহজ করেছেন।
* ভেজাল বিরোধী অভিযান: শঠিবাড়ি বাজারের অস্বাস্থ্যকর খাবার হোটেল এবং পণ্যের মূল্যতালিকা না থাকার কারণে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করেন। এছাড়াও কম ওজনের পণ্য বিক্রির অভিযোগে তিনি ফিলিং স্টেশনকেও জরিমানা করেছেন।
* প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা: চাইনিজ দোয়ারী এবং কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তিনি দেশীয় মাছের প্রজনন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছেন।
* শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার: শিক্ষাবান্ধব ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি নিয়মিত স্কুল, কলেজ, ও মাদ্রাসা পরিদর্শন করে শিক্ষাকার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন।
* অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কাজ: তিনি টিসিবির পণ্য বিক্রির তালিকায় থাকা ভুয়া কার্ড বাতিল করেন, বিএডিসির সেচ লাইসেন্স প্রদানে সিন্ডিকেট ভেঙে দেন, এবং জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করেন।
অদৃশ্য শক্তির নীরব চাপ এবং বদলির নেপথ্য কারণ
ইউএনও জিল্লুর রহমানের এই সাহসী ও জনস্বার্থমূলক পদক্ষেপগুলো অনেকের স্বার্থে আঘাত হেনেছিল। বিশেষ করে আন্ডারপাস থেকে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের মতো কঠোর সিদ্ধান্তগুলো একটি শক্তিশালী চক্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাঁর বদলির পর দ্রুত সেই একই জায়গাগুলো পুনরায় দখল হয়ে যাওয়া প্রমাণ করে যে, এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে। এই চক্র রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অবৈধ ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করে আসছে, যা সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এই ঘটনা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, যখন কোনো সরকারি কর্মকর্তা জনগণের জন্য কাজ করতে চান, তখন এক অদৃশ্য শক্তি তাকে বাধা দেয়। এই শক্তিকে প্রতিহত করা এবং ইউএনও জিল্লুর রহমানের মতো সৎ ও সাহসী কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান নিজে বলেন, "সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সব সময় চেষ্টা করি মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের।"
তাঁর এই কর্মস্পৃহা এবং জনগণের প্রতি ভালোবাসা প্রমাণ করে যে, তিনি যতদিন মিঠাপুকুরে ছিলেন, ততদিন জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তাঁর এই বদলি এক সাহসী প্রশাসনিক কর্মকর্তার জনকল্যাণমূলক যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই নীরবতা ভেঙে, জনগণের কথা বলা উচিত।