সাকিব আল হাসান
আলোর দিশারী শিশু ফোরামের পরিবেশবান্ধব ও মানবিক কার্যক্রম
জামালপুর উপজেলার বগাবাইদ গ্রামে এক ব্যতিক্রমী ও মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আলোর দিশারী শিশু ফোরাম। আজ, ১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, ফোরামের সভাপতি অর্পা-এর নেতৃত্বে সদস্যরা এক হয়ে গ্রামজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন। তবে এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়, বরং এর মাধ্যমে এলাকার হতদরিদ্র শিশুদের শিক্ষার সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
পরিবেশ রক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের এক অভিনব প্রচেষ্টা
বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে, সেখানে আলোর দিশারী শিশু ফোরাম সেই প্লাস্টিক সংগ্রহ করে এক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংগৃহীত প্লাস্টিক পরবর্তীতে বিক্রি করে তার অর্থ অভাবী শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যয় করা হবে।
ফোরামের সভাপতি অর্পা বলেন,
"আমরা শুধু প্লাস্টিক সংগ্রহ করছি না, আমরা এই প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করছি এবং এর মাধ্যমে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার জন্য একটি তহবিল গঠন করছি। এই কার্যক্রম পরিবেশ রক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের এক সমন্বিত প্রচেষ্টা।"
এলাকাবাসীর সাড়া ও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া
শিশু ফোরামের এই উদ্যোগ এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক তুলে দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ এই উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত করার পরামর্শ দিয়েছেন।
গ্রামের একজন প্রবীণ বাসিন্দা বলেন,
"শিশুরা নিজেদের উদ্যোগে এত বড় কাজ করছে দেখে আমি সত্যিই গর্বিত। একদিকে তারা পরিবেশকে পরিষ্কার রাখছে, অন্যদিকে দরিদ্র শিশুদের জন্য কিছু করছে। এ ধরনের উদ্যোগ সমাজের সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।"
একজন অভিভাবক বলেন,
"আমাদের সন্তানেরাও যেন এ ধরনের ভালো কাজে যুক্ত হয়, সেটাই চাই। শিশুরাই যদি পরিবেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবতে শেখে, তাহলে ভবিষ্যৎ আরও সুন্দর হবে।"
কীভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হলো?
বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্লাস্টিক সংগ্রহ: শিশু ফোরামের সদস্যরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন ও অন্যান্য প্লাস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করে।
সংগৃহীত প্লাস্টিক আলাদা করা: প্লাস্টিকগুলো ধরণ অনুযায়ী আলাদা করে রাখা হয়, যাতে সহজে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী হয়।
বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুতকরণ: স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্লাস্টিকগুলো বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।
উৎপন্ন অর্থ দরিদ্র শিশুদের শিক্ষায় ব্যয় করা: বিক্রিত প্লাস্টিক থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়ে স্কুল ড্রেস, বই, খাতা ও অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী কেনা হবে।
শিশু ফোরামের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শিশু ফোরামের সদস্যরা জানিয়েছেন, এটি শুধু একটি একদিনের কার্যক্রম নয়, বরং এটি নিয়মিত আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় পরিসরে পরিচালিত হবে এবং অন্যান্য গ্রামেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
অর্পা বলেন,
"আমরা চাই, শুধু আমাদের গ্রাম নয়, আশপাশের এলাকাগুলোতেও এ ধরনের উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক। প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই এবং সেই সঙ্গে দরিদ্র শিশুদের জন্য একটি শক্তিশালী সহায়তা কাঠামো গড়ে তুলতে চাই।"
পরিবেশ রক্ষা ও সমাজসেবার এক সফল সংযোগ
এ ধরনের উদ্যোগ শুধু জামালপুর নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্যই একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। যেখানে শিশু-কিশোররা পরিবেশ রক্ষা, পুনর্ব্যবহার ও সামাজিক উন্নয়ন—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি একসঙ্গে মনোযোগ দিচ্ছে।
এই কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি দরিদ্র শিশুদের ভবিষ্যৎ শিক্ষার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি দেখিয়ে দিয়েছে, সচেতনতা, ইচ্ছাশক্তি ও একতা থাকলে সমাজের ছোট ছোট উদ্যোগও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।