সাকিব আল হাসান
ঠাকুরগাঁও, ১৪ ফেব্রুয়ারি:
শিশুদের আত্মনির্ভরশীল, সচেতন ও নেতৃত্বগুণে দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ে আয়োজন করেছিল দুই দিনব্যাপী "জীবন দক্ষতা উন্নয়ন ও নেতৃত্ব বিকাশে সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ"। এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে রজনীগন্ধা শিশু ফোরামের সদস্যরা, যারা শিশু অধিকার রক্ষা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও নেতৃত্ব বিকাশে নিজেদের যোগ্য করে তুলতে আগ্রহী।
প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য ছিল শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা, যাতে তারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারে। শিশুদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রশিক্ষণে এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হয়। বিশেষ করে শূন্য ক্ষুধা, শূন্য অপুষ্টি, শূন্য বাল্যবিবাহ, শূন্য শিশুশ্রম ও শূন্য প্লাস্টিক—এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়।
প্রথম দিনে শিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ক্ষুধা ও অপুষ্টি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের শেখানো হয় কীভাবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা যায় এবং পুষ্টির ঘাটতি দূর করা সম্ভব। এরপর আলোচনা হয় বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করার উপায় নিয়ে। প্রশিক্ষকরা অংশগ্রহণকারীদের বোঝান, কিভাবে বাল্যবিবাহ একটি শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরবর্তী সেশনে শিশুদের শিক্ষা ও অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়। শিশুশ্রমের কুফল তুলে ধরে প্রশিক্ষকরা বলেন, শিশুদের খেলাধুলা ও শিক্ষা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে, যা শিশুশ্রমের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত হয়। তাই পরিবার ও সমাজকে সচেতন করার মাধ্যমে শিশুশ্রম বন্ধ করা জরুরি। পাশাপাশি, পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য শূন্য প্লাস্টিক ব্যবহার বিষয়ক সেশন নেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীদের শেখানো হয় কীভাবে প্লাস্টিক দূষণ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন করা যায়।
দ্বিতীয় দিনে নেতৃত্ব বিকাশ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কীভাবে একজন শিশু নিজের সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানে কাজ করতে পারে, কীভাবে নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করা সম্ভব—এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, হতদরিদ্র শিশুদের শিক্ষায় সহযোগিতা এবং সময় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা হয়। শিশুরা কীভাবে তাদের সময় সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নিজের ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে বাস্তবভিত্তিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণের শেষ পর্বে রজনীগন্ধা শিশু ফোরামের সদস্যরা শপথ নেন যে, তারা এই প্রশিক্ষণ থেকে অর্জিত জ্ঞান নিজেদের এলাকায় বাস্তবায়নে কাজ করবেন। তারা নিজেদের সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিশুদের অধিকারের বিষয়ে মানুষকে জানাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করেন।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের এই প্রশিক্ষণ শিশুদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যতকে আরও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে। শিশুদের অধিকার, সামাজিক সমস্যা সমাধান ও নেতৃত্ব গঠনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া এই প্রশিক্ষণ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।